পোস্ট বার দেখা হয়েছে
বীরসিংহের সিংহশিশু—
দরিদ্র ঘরে জন্মেও, হিরণ্ময় আলো নিয়ে এসেছিলেন।
নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবার,
পিতা ঠাকুরদাসের তেজ, মাতা ভগবতীর সততা ও প্রজ্ঞা।
ছেলেবেলা থেকেই মেধার দীপ্তি।
গ্রামের পাঠশালায় প্রথম,
তারপর হাঁটাপথে মাইল ফলক চিনতে চিনতে কলকাতায় আসা।
ভোরবেলা বাজার, রান্না, বাসন মাজা,
তারপর কলেজ, রাত জেগে পড়াশোনা।
পিতার কঠিন শাসনও ভাঙতে পারেনি
তাঁর অদম্য জেদ।
বাবার প্রহার সহ্য করেও বারবার উঠে দাঁড়িয়েছেন—
বই হাতে, দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে।
সংস্কৃত কলেজের ছাত্র,
প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম,
তীক্ষ্ণ স্মৃতি আর অপরিসীম অধ্যবসায়ে
একদিন অর্জন করলেন "বিদ্যাসাগর" উপাধি।
বাংলা, সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি, উর্দু—
যে ভাষা ছুঁলেন, সেখানেই দীপ্তি।
কর্মজীবনে তিনি ছিলেন গুরুদায়িত্বে আসীন,
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক,
সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ।
কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল—
শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া।
বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষিত করা।
তিনি গড়লেন ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয়,
রাত্রিকালীন বিদ্যালয় সাধারণের জন্য,
সকলের কাছে নিয়ে গেলেন বাংলা অক্ষর পাঠের আলোকবর্তিকা - বর্ণপরিচয়।
“শ্রম না করলে শিক্ষা নয়”—
তাঁর কণ্ঠে এই বাণী আজও পথপ্রদর্শক।
বিদ্যাসাগর ছিলেন শুধু শিক্ষক নন,
তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক।
বিধবা বিবাহ আন্দোলনে তিনি ছিলেন একাই এক যোদ্ধা।
গোঁড়া সমাজের বহুমাত্রিক আঘাত, ষড়যন্ত্র, হত্যার হুমকি—
সত্বেও তিনি, কিন্তু থামেননি।
বরং ইচ্ছাশক্তিকে করেছেন প্রবলতর।
এক বিধবার সঙ্গে নিজের ছেলের বিবাহ দিয়ে
প্রমাণ করেছিলেন সত্যকে।
বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ রোধে তাঁর সংগ্রাম
আজও অনুপ্রেরণা আমাদের।
তিনি ছিলেন মাতৃভক্ত, দানবীর, দয়ার সাগর—
অসহায় ছাত্রের পড়াশোনার খরচ,
দরিদ্রের ওষুধ, ক্ষুধার্তের আহার
নিজের শেষ কপর্দক দিতেন নিঃশব্দে।
খাঁটি বাঙালি জীবন,
ধুতি, চাদর, চটি জুতোতে সরল অঙ্গীকার।
কিন্তু সরলতার আড়ালে ছিল দুরন্ত অগ্নিশিখা।
ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত,
বাংলা গদ্যের নির্মাতা।
“বর্ণপরিচয়” হাতে নিয়ে হাজারো শিশু শিখেছে বাংলা ভাষা।
তাঁর সৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্য পেল নতুন পথ।
এক বন্ধুর সহায়তায় "সংস্কৃত যন্ত্র "
নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে
প্রকাশ করে চললেন তাঁর অসংখ্য পুস্তক।
শেষ জীবনে শহর কোলকাতার স্বার্থপরতা,
কোলাহল থেকে বিদায় নিয়ে আশ্রয় নিলেন
সাঁওতাল অধ্যুষিত কর্মাডারে।
আঠারো বছর কাটালেন সহজ সরল মানুষগুলোর সেবায়, তাদের বান্ধব হয়ে।
ভুট্টা কিনে আবার তাদেরই দিতেন বিলিয়ে।
বিদ্যাসাগর বলেছিলেন—
“পিতা-মাতাই জীবন্ত দেবতা,
তাঁদের অবমাননা ঘোরতর অধর্ম।”
বলেছিলেন—
“সরল জীবনই সুখের মূল,
শ্রমই শিক্ষার পথ।”
আজও তাঁর কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয় -
এক নির্ভীক, তেজস্বী, দৃঢ়চেতা মানুষের কণ্ঠস্বর।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর—
তিনি কেবল এক মানুষ নন,
তিনি শিক্ষার আলো, মানবতার মশাল,
সমাজ সংস্কারের অগ্রদূত।
এক মেরুদন্ড সোজা রাখা আপসহীন মহাপ্রাণ।
কৃতজ্ঞ বঙ্গভূমি
কৃতজ্ঞ আজকের নারী প্রগতি
কৃতজ্ঞ শিক্ষা ও বাঙালি সংস্কৃতি।
এই এক মানবের প্রতি।
যিনি দয়ার সাগর, বিদ্যার সাগর।
অমলিন বাতিঘর হয়ে যিনি আজও
বেঁচে আছেন, থাকবেন।
আমাদের সত্তায়, প্রগতির অগ্রযাত্রায়।
-----------------------------------------------------------
Photo courtesy - facebook থেকে
রচনাকাল ২৪.০৯.২০২৫, কোলকাতা
0 মন্তব্যসমূহ