পোস্ট বার দেখা হয়েছে
আত্মঘাত
বর্ষণের জলধারা পেয়ে তৃষিত মনে
জেগে ওঠে মরুর প্রতি প্রগাঢ় করুণা
অবিরল রোদে তাপের মমতা নিতে নিতে
সাইবেরিয়ার বরফে খুঁজে পাই নিখাদ মৈত্রী
বৈরি দিনের তৈরি পাটাতনে
সুদিনের মহাকাব্য তৈরি হয় অমিত প্রতিজ্ঞায়।
মুষিকে শার্দুল দেখে রাসভও ঋষি হয়ে ওঠে মাঘে
বেড়ালেরা তপস্বী সেজে আদর্শের ধ্বজা ধরে থাকে
বিহগের নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় কোতোয়াল শ্বাপদ
সমুদ্র মন্থনে অমৃত নয় গরলের ভাণ্ড উঠে আসে।
অপরিণত লোহিত কণিকার হাতে দেহের শ্বসনের চাবি
শ্মশানের দারোয়ান ব্যস্ত দায়িত্ব পেয়ে পাগলের প্রায়
জটলার আদালতে জনতার হেনস্তার দিনলিপি লিখে
উন্মাদ সময় পাগলা গারদে নাচে লালের নহরে ভেসে।
=====
অকৃতজ্ঞতা
পতনের কালে আকাশটাকে মনে হয় অহেতুক
সমুদ্র হয়ে ওঠে বৃদ্ধা মায়ের চেয়েও অদরকারি
নিজের দাঁত অতিরিক্ত হয়ে যায় অন্নে উদরপূর্তির পর
বৃষ্টির পরে হাতের ছাতা বোঝা হতে শুরু করে।
অন্ধের যষ্টি দৃষ্টি পেলে অপাংক্তেয় হয়ে ওঠে
গ্রীষ্মে শীতের কাঁথা হয় নিকৃষ্ট জঞ্জাল
রেমিট্যান্স পাওয়া স্ত্রীর কাছে স্বামী হয় দীর্ঘশ্বাস
পাহাড় চূড়ায় আরোহনের পর লাঠি হয় বর্জ্যবস্তু।
যে তর্জনী আঁকে মানচিত্রের অবয়ব
পতাকা পেলে তা হয়ে যায় কর্তনের প্রথম লক্ষ্য
যে সিংহনাদ অভয়ের মর্মবাণী ছিলো
ভয় জয়ের পর তা হয়ে যায় শ্রবণবৈরি।
যে হাঁটা শেখায়, হাঁটতে শেখার পর বের হয় তার খুঁত
যে গাছে চড়ায় মই কাড়ার দোষ চাপে তার ঘাড়ে
মাথায় মুকুট যে পরায় সম্মানের
দিনশেষে তাকেই দাঁড়াতে হয় আদালতের কাঠগড়ায়।
===
অকালের চক্রব্যূহ
বিনত বিক্ষেপে বিচিত্র বীক্ষণের এই অনভিপ্রেত সময়ে
ইতিহাসকে পুনরাবৃত্ত হতে দেখে মনে পড়ে যায়
নুহের মহাপ্লাবন কিংবা কৃষ্ণবিবরের মহাপ্রলয়ের কথা
এই বিকৃত রোদে এই বর্বর জোছনায় বসে সত্যি হয়ে যায়
মরুমর্ত্যের মহাআঁধারের সর্বনাশী আগ্রাসনের অনিবার্যতা।
অম্লজানে টইটম্বুর প্রতিবেশে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা প্রাণের স্পন্দনে
কেবল ধ্বনিত হয় সুবর্ণ দিনের হাহাকার
বিশৃঙ্খল স্বাধীনতায় জীবনের সুন্দরগুলো আজ নির্বাসিত
কোকিলের কণ্ঠে কাকের ডাক কিংবা কাকের লেজে ময়ূরপুচ্ছে
লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সৌরজাগতিক আবহমান শৃঙ্খলার সৌন্দর্য
চারদিকে কেবল একটা আর্তনাদে বুঝা যায় জনপদ আজও জীবিত
আজ কিংবা আগামীকে নয়, আমাদের গতকালকেই চাই, খুব বেশি করে চাই।
====
খর কাল
সূর্যরশ্মিতে ঝরে পড়ছে কালের অশ্রু
মেঘেরাও ভুলে গেছে প্রশান্তি
সময় এখন কুশলী দড়াবাজিকর
পাল তুলে বয়ে যায় স্রোতের অনুকূলে।
বাগানে বেড়েছে দেশি ডালিমের চাষ
মৃত্তিকায় তবু রক্তশূন্যতা আজন্মের
মনের ওপর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণহারা
পেশিগুলো বেপরোয়া প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে।
বরফ ভাঙার প্রাণান্তকর চেষ্টা কৃতঘ্নের
তবু হিমালয় অটুট তার উচ্চতায়
অলীক পর্বত বহু কসরতে মুষিক প্রসব শেষে
বেনিয়ার কাছে বন্ধক দেয় আঙিনার স্বাধীনতা।
====
সময়
সময় ঝুলে আছে অবরোধে
খররোদ খৈ ফোটায় জনতার মুখে
অসহায় চোখ বটগাছ হয়ে যায় দৃষ্টির অভিজ্ঞানে
ছেঁড়াফাটা ধৈর্যকে তালি দিতে দিতে হয়ে গেছে বাউলের আলখাল্লা।
সূর্যের অশ্রুতে মেঘও বাষ্প হয় পরিতাপে
বালিকণার বসন্তে শুরু হলো সান্ডা-সকাল
ময়ূরপুচ্ছে কাকেরা নেচে ওঠে উল্লাসে
নির্ঘুম মানচিত্র ছোট হবার ভয়ে ছেড়েছে নাওয়া-খাওয়া।
হিমালয়কে নির্বাসনে পাঠিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে আবর্জনার স্তূপ
নিজ পায়ে যার মাটি নেই সে ভয় দেখায় মৃত্তিকা-বীরকে বাস্তুচ্যুতির
কাচের ঝনাৎকারে হিরে গুটিয়ে থাকে মান বাঁচাতে
সংস্কারের মূলার আগায় ঝুলে আছে পঙ্গু সময়।
0 মন্তব্যসমূহ