শ্রাদ্ধের পরে || অজয় চক্রবর্তী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

মাত্র মাস দুয়েকের অসুস্থতায় ভুগে প্রভাত বাবু ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়েছেন। শহরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর যথেষ্ট সামর্থ থাকলেও মানুষের অভাবে সেটা হয়ে ওঠেনি। গ্রামের ডাক্তার বাবুই চিকিৎসা করেছেন। স্ত্রী অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন। দুই মেয়ে মিনতি আর বাসন্তী। মিনতির বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে জামাইয়ের চাকরির সুবাদে ঝাড়খন্ডে থাকে।  প্রভাত বাবু আর ছোট মেয়ে বাসন্তী সহ  কয়েকজন কাজের লোক নিয়ে প্রভাত বাবুর সংসার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রচুর জায়গা জমি, ঘরবাড়ি, পুকুর ইত্যাদি থাকার কারণে গ্রাম ছেড়ে আর কোথাও যাননি প্রভাত বাবু। অফুরন্ত টাকা পয়সা ও সম্পত্তি থাকার ফলে তিনি অত্যন্ত অহংকারী ও রাশভারি ছিলেন।আশেপাশে দুই এক ঘর প্রতিবেশী ছাড়া গ্রামের কারো সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল না। তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে বড় মেয়ে মিনতি বাড়িতে আসে। প্রভাত বাবুর মৃত্যুর পর মেয়েরা পাড়ার লোকেদের সহযোগিতায় শ্রাদ্ধের কাজকর্ম শেষ করে মৎস্য মুখীর দিন দুপুরে নিমন্ত্রিতরা খাওয়া দাওয়ার পর সংস্কার অনুযায়ী বাবার পছন্দ সহ খাবারদাবার বানিয়ে গঙ্গা না থাকায় গ্রামের ঘাট বাঁধানো পুকুর পাড়ে সব গুছিয়ে ফুল, প্রদীপ, ধুপকাঠি জ্বালিয়ে বাবার আত্মা খাবে সেই উদ্দেশ্যে ভাত সরা রেখে আসে।খাবার তালিকায় বাবার পছন্দের খাবার পোলাও, ফ্রাইড রাইস, ভেটকি মাছ, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, চিংড়ির মালাইকারি, দই ,মিষ্টি ,পান সবই ছিল।খাবার দাবার গুছিয়ে রাখার পর পুরোহিত মশায়ের নির্দেশ মত আর পিছনে না তাকিয়ে ওরা বাড়ি চলে আসে। 


কাজকর্ম মিটে যাবার কয়েকদিন পর বড় বোন মিনতির হঠাৎ কানে এলো পাশের বাড়ির হরিপদ পাগল চিৎকার করে  করে যে কথাগুলো বলছে, সেগুলো ওদের বাবা বলতো। প্রথমদিকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও যখন বিষয়টা বাড়তে থাকে তখন খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঘাট বাঁধানো পুকুর পাড়ে মৎস মুখির দিন রাতে  বাবার আত্মা খাবে বলে ওরা যে খাবার দাবার রেখে এসেছিল সেগুলো সব হরিপদ পাগল চেটেপুটে খেয়ে এসেছে।


হরিপদ ওদের পাশের বাড়িতেই থাকে। অবস্থা সম্পন্ন পরিবার। তিন ভাইয়ের মধ্যে হরিপদ সবার ছোট।ছোট বেলা থেকেই ওকে পাগল বলেই সবাই জানে।

ওর পাগলামিটা অন্য ধরনের। সব সময় খাবার নেশায় ছুটে বেড়ায়।যেখানে যেই খাবার জিনিস দেখবে সেটাই ওর খাওয়া চাই। বাজারের দোকানে,দোকানে খাবার জিনিস চেয়ে চেয়ে খেয়ে বেড়ায়। বাড়িতে ওর ভয়ে কোন খাবার জিনিস সাধারণভাবে রাখা যায় না।এলাকায় যে কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে সকাল থেকে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।না খেয়ে সেখান থেকে ফিরবে না।


কদিন হল হরিপদ আর বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না।সারাদিন  প্রভাত বাবুর গলায় তার দৈনন্দিন কথাবার্তা গুলো চিৎকার করে বলে চলেছে। নিরাপদ হরিপদর বড়দা। বাসন্তীদের বাড়িতে এসে সব বিষয় বলার পর চিকিৎসার জন্য ওদের সাহায্য চাইলো। দুই বোনের সম্মতিতে পাশের গ্রামের একজন মুসলিম তান্ত্রিকের কাছে হরিপদকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হল। তান্ত্রিকের আখড়ায় পৌঁছানোর পর হরিপদ কিছুতেই গাড়ি থেকে নামতে চাইল না। নিরাপদ এবং ওর ভাই দুজনেও ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামাতে পারছে না। গায়ে যেন অসুরের শক্তি ধারণ করেছে। হঠাৎ দুই বোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "কিরে মা আমাকে এত বোকা ভেবেছিস তোরা? আমার পছন্দের সমস্ত খাবার ও চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে, ওকে এত সহজে আমি ছেড়ে দেবো"? এই কথা শুনে দুই বোন ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। এ তো ওদের বাবার গলা। কিছুতেই গাড়ি থেকে হরিপদকে নামানো যাচ্ছে না দেখে তান্ত্রিক এসে সকলে মিলে ধরে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে তান্ত্রিকের আখড়ায় নিয়ে গেল। সবাইকে সরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে তান্ত্রিক প্রভাত বাবুর আত্মাকে হরিপদ শরীর থেকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও না পেরে তার থেকে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন দুজন তান্ত্রিক কে খবর পাঠালেন। তারা এসে অনেক চেষ্টা করে আত্মাকে শরীর থেকে বের করলেন একটা শর্তে যে আগামী অমাবস্যার দিন রাতে আবার প্রভাত বাবুর পছন্দ মতো সমস্ত খাবার ওই পুকুর পাড়ে শান বাঁধানো ঘাটে দিয়ে আসতে হবে। তা না হলে প্রভাত বাবুর আত্মা আবার হরিপদর দেহে প্রবেশ করবে।


===========

অজয় চক্রবর্তী

বি-৮\১২ কল্যানী

সংহতি আবাসন ফ্ল্যাট নং-সি-১

কল্যানী, নদীয়া 

পিন কোড-৭৪১২৩৫

ফোন/হোয়াটসঅ্যপ ৮৯০২৩৪৮৫১৫

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ