রেওয়াজি ~ শৌভিক গাঙ্গুলী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 
আপনাদের বাঙালিদের ঐ এক কথা, রানের থেকে দিন! আরে দাদা রান ছাড়া কি গোটা শরীরে আর মাংস নেই?


সপাসপ চপার নেমে আসছে আর রক্তাক্ত কাঠের গুড়িতে চলকে পড়ছে মুন্নার দোকানের রেওয়াজি মাল! চাচাজি চল্লিশ বছরের রেওয়াজি  হাতে দুরন্ত এক্সপ্রেসের গতিতে সাইজ করছেন খাসির মাংস।

রবিবারের লাইনটা বড়ো। তা সেতো মেট্রোর টিকিট কাউন্টার থেকে ক্যাওড়াতলা, লাইন দেওয়ার অভ্যাস বাঙালিদের রক্তে। এক, দুই, তিন, প্রিয়মবাবু দেখলেন তিনি সাত নম্বরে। গিন্নির গুতোয় সাতসকালে উঠে গুটিগুটি টালিগঞ্জে মুন্নার দোকানে আসতে ৭:৩০।


-আদা, রসুন পেঁয়াজ আর টমেটোটা ভুলে যেওনা আবার, কী যে সাত-পাঁচ ভাবো কে জানে, চারটে জিনিস মনে থাকেনা। খেজুর আমস্বত্ত, দিয়ে টমেটোর চাটনি ভোলা খুব ভালোবাসে।

শালাবাবু আর তার গিন্নি আসবে আজ।

-এত টাইম নেয় না! এরপর দুধটা শেষ হয়ে যাবে।

পিছন থেকে আওয়াজ উঠল। 

প্রিয়মবাবু দেখলেন সামনের লোকটা খবরের কাগজের পাতা মেলে ধরে পড়ছে।

-ধুসস! কিসসু হবে না। আসল ঘটনা থেকে সব কোনদিকে ঘুরে গেল। ঐ ইডি, সিবিআই যেগুলোকে পাকড়াও করছে; কিছু হলো তাদের? ধুমসোটাতো বেল পেয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘরে ফিরলো।

সত্যি, হাসপাতালের ঘটনাটা পাশবিক, শহর জুড়ে মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আগে দেখেননি, কিন্ত..

-কতটা লাগবে?

চাচার কর্কশ গলার স্বরে চমকে উঠে প্রিয়ম কোমল সুরে বললেন,

-দু কেজি, ইয়ে মানে বলছিলাম রান থেকে।


ঘাড় ঘুরিয়ে টকটকে লাল চোখে তাকিয়ে চপার হাতে একলাফে উঠে চাচা সামনে ঝোলানো মালটা এক ঝটকায় কাঠের গুড়ির ওপর থপাস করে ফেললেন। প্রিয়মের চোখে ভেসে উঠল চেতলার রক্তচামুণ্ডা মায়ের সামনের হাঁড়ি কাঠে ছাগলের মুখটা! বড্ড চেনা যেন!


অটোটা দাড়িয়ে পড়লো। একদল ছেলেমেয়ে মাথায় কালো ব্যান্ড বেধে মিছিল করে যাচ্ছে, হাতে প্ল্যাকার্ডে বিচারের দাবি চেয়ে আর্জি।


প্রিয়ম আলাদা করে একটু রেওয়াজি চর্বি নিয়েছেন। আতপ চালের গুঁড়ো, আদা, পেঁয়াজ, কাচা লঙ্কার কুচি দিয়ে বড়াগুলো যা মচমচে হবে না! শালাবাবু কাল রাতে ফোনে বলেছিল,

-প্রিয়মদা কাল একটা সিঙ্গেল মল্ট নিয়ে আসবো, একজন কন্ট্রাকটার অফিসে দিয়ে গেছে।


প্রিয়মের মুখে একফালি হাসি ফুটে উঠলো, জমে যাবে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ