কবিতা গুচ্ছ ~ শিবানী গুপ্ত




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

পাথরেও আছে হৃদয়


ক্রমান্বয়ে বেদনারা স্তূপীকৃত হতে হৃদয় একসময় পাথর হয়ে যায়।

নদীতীরে পড়ে থাকা পাথরগুলোর উপর স্রোতধারা বয়ে চলে।

ওই পাথরগুলো কতনা ঘটনার সাক্ষী থাকে।

নদীর জোয়ার ভাটার,বর্ষাতে দুকূল ভাসানো রূপের সাক্ষী থাকে পাথর।

কখনো প্রখর খরা,

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে চলে।

 অতিরিক্ত জলোচ্ছাসে পাথর টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে।

প্রতিটি টুকরোর খাঁজে অলিখিত অদৃশ্য বেদনার শিলালিপি।

মানুষের হৃদয়েও তেমনি অসংখ্য  না বলা কথা মন গহীনে জমা থাকে।

প্রতিটি কথার সংলাপের প্রতিটি অক্ষরের গায়ে কতশত স্মৃতি কথা।

একসময়ে জমতে জমতে পাষাণের আকৃতি নেয়।

মন বড়ো সংবেদনশীল ।

সবকিছুই  সে পরম যতনে আগলে রাখে।

প্রিয়জনের কাছ থেকে আঘাত পেলেও অভিমানী মন তা ব্যক্ত করতে পারেনা।

ফলে, দুঃখগুলো প্রকাশের পথ পায়না।

একসময়ে,জমাট বেঁধে পাষাণে পরিণত হয়। 

 কিন্ত  সময়ের ধারাপাতে যতোই ব্যথা থাকুক না কেন,অভিমানের পলেস্তারা খসে।

মনের চোখে তখন অশ্রকণা বিন্দু বিন্দু পাষাণ হৃদয়কে সিক্ত করে। 

এমনি কতনা পাথরের কলেবরে লেখা আছে কতশত বিমূর্ত বেদনার কাহিনী।

গভীর অনুভবী মনের আয়নাতেই শুধু ধরা পড়ে ,

পাথরেও আছে একটি বিষন্ন  হৃদয়।

====

গরিয়সী বরাক কথা

  

নদী মাতৃক দেশটি মোদের   বরাক উপত্যকা,

নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরা নেইকো লেখা জোখা।

ছাতাচূড়া,বড়াইল, ভুবন পাহাড় আছে কত,

চারপাশেতে চা- বাগিচার অরূপ শোভা যত।


এই বরাকের ধূলিকণা শহিদ রক্তে মেখে,

ভাষা সংগ্রামের অমর কথা ইতিহাসে লেখে।

বাংলা মোদের মাতৃভাষা মায়ের মুখের বুলি,

সেই ভাষাকে রক্ষা করতে লাগলো বুকে গুলি।


উনিশশো একষট্টি সালে  বাংলাভাষা রোধে,

শাসকদল খড়্গহস্ত হলো ভীষন ক্রোধে।

উপত্যকা জুড়ে সবাই তুমুল প্রতিবাদে,

ঐক্যজোটে এক হয়ে সব মরণ পণ সাধে।


বরাকমাতার কোল সেরা ধন

একাদশ সন্তানে,

রোদ্ররোষে শাসক সেনা অগ্নিগুলি হানে।

 মাতৃভাষার  অমোঘটানে প্রাণটা দিলো যারা,

মৃত্যুঞ্জয়ী শাশ্বত যে কালের বুকে তাঁরা।


বীরাঙ্গনা কমলা আর দশটি বীর ছেলে,

একাদশের আত্মদানেই মাতৃভাষা মেলে।

সুদেষ্ণা,যীশু,জগন এরাও জীবন দানে,

অমর তাঁদের স্মৃতি কথা বরাকবাসীর প্রাণে।


কৃষ্টি,সংস্কৃতি, লোকগাঁথা,জারি,

সারি গানে ,

ঐতিহ্যময় কীর্তি নিয়ে বরাক বিশ্ব মানে।

 শিল্প- সাহিত্যে অগ্রণী যে বরাক সবাই জানে,

সাহিত্যের সর্বস্তরে অবদান দানে।


নাটক,নভেল,নৃত্যকলা ধামাইল নাচের মাঝে,

কবির শহর বলেও বরাক উপত্যকা রাজে।

যশের মুকুট মাথায় পরে কত কত কবি,

বরাকভূমির সুসন্তানে শ্রদ্ধা দানে সবি।


উনিশে মে এলে বরাক অশ্রু স্রোতস্বিনী,

ফুকারিয়া আজো কাঁদে বরাক জননী।

গরিয়সী বরাক মাতার স্নেহের আঁচল ছায়া,

ক্লান্তি হরে দুঃখ দূরে শীতল করে কায়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ