শ্রদ্ধার্ঘ্য – কবি বিনয় মজুমদার || জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


মাঠে মাঠে ঘাসের গন্ধ, আকাশে নক্ষত্রের মেলা

অদ্ভুত সমীকরণে বাঁধা পড়ছে প্রেম, গণিতের সূত্রে মিশছে বিচিত্র অনুভবে..

এই কবি যেনো এক আশ্চর্য জগতের বাসিন্দা।


১৯৩৪ সালে মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো শহরে জন্ম,

দেশভাগের ঝড়ে এসে দাঁড়ালেন বাংলার মাটিতে।

বিজ্ঞান পড়লেন, যন্ত্রকৌশল শিখলেন,

কিন্তু কলমে যখন খুললেন খাতা 

তখন জেগে উঠলো এক অন্য ব্রহ্মাণ্ড।


তিনি লিখলেন-

“তুমি আমার অঙ্কের সূত্র,

তুমি আমার জ্যামিতির বৃত্ত।”

প্রেমিকা গায়ত্রী চক্রবর্তীর উদ্দেশে লিখলেন অমর কাব্য, "অঘ্রাণের অনুভূতিমালা,"

যেখানে প্রেম মানে জ্যামিতি,

যেখানে ভালোবাসা মানে, রহস্যময় আকাশে টানা দীর্ঘ সরলরেখা।


কিন্তু জীবন সব সময় সমান্তরালে চলে না।

একান্ত ভালোবাসা এলো না কাছে।

বন্ধু, আত্মীয়, সমাজ কেউই

এই অদ্ভুত কবিকে বুঝতে পারল না।

তিনি ক্রমশ ডুবে গেলেন নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে,

মানসিক অসুস্থতার দীর্ঘ অরণ্যে।


তবু তিনি লিখলেন - 

একেকটি কবিতা যেন তারার ধুলো,

অন্য এক গাণিতিক নক্ষত্রপুঞ্জের ইশারা।


বাংলা কবিতায় আগে কখনো লিপিবদ্ধ হয়নি,

এত স্বতন্ত্র গণিতনির্ভর প্রেমের মায়াবী রূপকথা।


তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, আবার শিশুর সরলতায় ভাস্বর।

তিনি ছিলেন একা, তবু লক্ষ পাঠকের বন্ধু।


তিনি বলতেন—

“আমি শুধু কবি নই, আমি তোমাদের দুঃখের সহযাত্রী।”


যখন বাংলা কবিতার জগতে জ্বলজ্বল করছেন - 

সুনীল, শক্তি, শঙ্খ—

তখনও এক কোণে নিভৃতে বসে ছিলেন বিনয়,

একেবারেই স্বতন্ত্র।

বিজ্ঞানমনস্ক, অথচ পূর্ণ রোমান্টিক।


দীর্ঘ একাকীত্বে তিনি ক্রমশ ক্ষীণ হলেন,

একসময় অর্থহীন জীবনে পায়ের তলার শেকড় ফেললেন হারিয়ে।

তবু  থামল না কলম।

“তুমি আকাশের মত, আমি শুধু তার মাপজোখকারী”

—এই অদ্ভুত প্রেমের স্বীকারোক্তি

তাঁকে দান করলো অমরত্ব।


তিনি লিখলেন- "আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন সুর হ'য়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।"


২০০৬ সালের ডিসেম্বরে

চিরনিদ্রায় চলে গেলেন কবি বিনয় মজুমদার।

তবু আজও তাঁর কবিতা পড়লেই মনে হয়—

তিনি আমাদের মধ্যেই কোথাও বসে আছেন,

তাঁর সূত্র, তাঁর রেখা, তাঁর ছায়া

মিশে গেছে জীবনের প্রতিটি সমীকরণে।


আসুন, আমরা তাঁকে স্মরণ করি..

কেবল নিঃসঙ্গতার কবি হিসেবে নয়, মানবমনের অদম্য অনুসন্ধানী এক 

সৃজনশীল মনের  যাত্রী হিসেবে।

যাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দ আজও বলে চলে -

“প্রেম এক চিরন্তন অঙ্ক,

মানুষ তার অসীম সমাধান।”

---------------------------------------------


শ্যামবাজার CESC অফিস, কোলকাতা 

১৬.০৯.২০২৫, copyright reserved

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ