পোস্ট বার দেখা হয়েছে
এক দীর্ঘ লাইন। লাইনের আদি অন্ত কোনটাই দেখা যাচ্ছে না । ওই পেছন থেকে ক্যামেরা নিয়ে কেউবা মোবাইল নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে সামনের দিকে। ভীষণ আনন্দ। সবার মুখে হাসি। আনন্দ হবেই বা না কেন? সারা গ্রাম যে উঠে এসেছে । কিন্তু দু একটি পুরুষ বাদ দিয়ে সবই মহিলা ,শিশু ,ছেলে, মেয়ে । তাদের মূখেও হাসি আনন্দ এবং বিস্ময়। অনেকের মুখে খানিকটা লজ্জাও দেখা দিলেও বিপ্লব তাড়িয়ে তাড়িয়ে অনুভব করছে এটা। সেই ই-তো ,তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে এই মেলাটি ব্যবস্হা করেছে। তারই তো উপরে ছিল এই অনুষ্ঠানটি সফল করার দায়িত্ব এবং সে একনিষ্ঠার সঙ্গে অনেক পরিশ্রম করে সফল করেছে। খুব খুশি সবাই। আনন্দের এক উৎসব যেন । চারিদিকে সাজানো-গোছানো স্টল। তাকে তাকে কাপড় সাজানো । মনে হচ্ছে যেন নতুন কাপড় । ওরা সবাই এক মাস ধরে বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জ থেকে সেই কাপড়গুলিকে এনে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রেস করে তারপর ক্যামেরাবন্দি করে তারপর আজকে এখানে এনে শূধুই প্রদর্শন নয়, উৎসবের মেজাজে বিতরণ । আজ গরীব মানুষদের পুরনো কাপড় বিতরণের মাধ্যমে 79 তম স্বাধীনতা দিবস সগৌরবে উদযাপন হচ্ছে। আমিও ছয় বস্তা কাপড় জোগাড় করে দিয়েছি বিভিন্ন জায়গা থেকে। আমিও ভীষণ খুশি। এক এক করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মহিলারা। কোথাও থেকে একটা আওয়াজ এলো ভেসে -এ দীর্ঘ লাইনটা দেখে -
দুঃখ হওয়া উচিত না আনন্দ ।
সংস্থাপকের পক্ষ থেকে যারা কাউন্টারে বসে আছে তারা একেক করে খুব হাসতে হাসতে বিতরণ করছে কাপড় কিন্তু ভাবছি কোন পুরুষ মানুষ এই লাইনে দাঁড়ায় নি কেন!!সেটা অবশ্যই বিচার্য বিষয় । গরিব মানুষ তাও আবার তাদের আত্মসম্মান! লাইনের দাঁড়াবে না বিনা পয়সার পুরনো কাপড়ের জন্য!!বিপ্লব এক একটি মহিলাকে ধরে ধরে বলছেন -খুশি তো , কাপড় পেয়ে ভালো লাগছে? তারা একটু লাজুক লাজুক মুখে হেসে মাথা নাড়ছে । বিপ্লবের এবং সংস্থার লোকেদের খুব আনন্দ হচ্ছে । সত্যিই তো আনন্দ হবার কথা। এত গরিব মানুষ তারাও তো মানুষ। স্বাধীনতার স্বাদ পাবে না তারা এবং তাদের ঘরে বাচ্চারাও কি আনন্দ করবে না এই বৈপ্লবিক স্বাধীনতা ।
আমাদের একটা দায়িত্ব তো আছে । কর্তব্য তো আছে সমাজের প্রতি দেশের প্রতি ।ভীষণ আপ্লুত হচ্ছি আমরা সবাই । আমারও তো কনট্রিবিউশন আছে। আমিও তো ৬ বস্তা ভালো ভালো পুরনো কাপড় দিয়েছি। বিপ্লব কাপড় দিচ্ছে ওই গরিব মহিলা ও ও বাচ্চাদের। কাপড় নিয়ে খুব খুশি তারা। দু'দিকেই হাসি হাসি মুখ । ফটো উঠছে মোবাইলে ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক ।
আরেকজন কিন্তু হাসছেন। তিনি আছেন অদৃশ্য । তাকে দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না বোঝাও যায় না। তিনি আর কেউ নয় তিনি স্বয়ং রাষ্ট্র।
0 মন্তব্যসমূহ