পোস্ট বার দেখা হয়েছে
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেও রবির বাবা রতন লোকের বাড়িতে ধান কাটতে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এলো । মাটির কলসির এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল খেয়ে রতন বিশ্রাম করছিল । এমন সময় রবির মা রত্না এসে বললো ,রবির স্কুলের মাস্টার মশাই গ্রীষ্ম কালের ছবি এঁকে নিয়ে যেতে বলেছে ।ওর আঁকার জন্য কোনো কিছু নেই । তুমি বাজার থেকে একটা রঙের বাক্স আর একটা তুলি এনে দাও না ।
রবি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে । তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান । গরিব জীবনে ছেলেটাকে মানুষ করার জন্য রত্না অনেক কষ্ট করে সংসার চালায় । কায়িক পরিশ্রমের উপর তাদের সংসার চলে ।
রতনের তখনো ক্লান্তি ভাব কাটেনি । ছেলের ছবি আঁকা নিয়ে রত্নার সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায় । সেই ঝগড়া শেষ পর্যন্ত মারপিটের মধ্য দিয়ে পরি সমাপ্তি ঘটে ।
রবি সব শুনেছে এবং দেখেছে । রাত্রি বেলা রত্না রান্না বান্না কিছু করেনি ।স্বামীর হাতে মার খেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ।রবি মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আর বলছে ,মা আর কখনো রঙের বাক্স চাইবো না । তোমার খুব লেগেছে না মা ? ডাক্তার বাবুর কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে আসবো ?
মা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন । আর বললেন , ওষুধ আনতে হবে না । আমি তোর হরি দাদুর বেগুন বাড়িতে কাজ করে তোকে রঙের বাক্স আর তুলি এনে দেবো বাবা । তোর বাবা এত পয়সা কোথায় পাবে । এখন কাজবাজ ও ঠিক মতো পায় না ।
এই সব কথা বলতে বলতে মা ও ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল ।
রতন ও ক্লান্ত ।সেও খালি পেটে ঘুমিয়ে গেল ।
রত্না সকালে উঠে ছেলেকে মুড়ি জল খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিল । স্বামীকে ও মুড়িজল দিল । রতন তা খেয়ে কাজে চলেগেল ।
স্কুলে স্যার সবার ছবি আঁকা দেখতে চাইলেন । রবি স্যারকে বললো , স্যার আমার ছবি আঁকার রং ও তুলি নেই ,তাই আঁকতে পারিনি । স্যার বললেন, তুমি শুধু পেন্সিল দিয়ে আঁকবে । আগামীকাল আমি খাতা দেখবো । কোনো অজুহাত শুনবো না ।
মনের দুঃখে রবি বাড়ি গিয়ে খাতা পেন্সিল দিয়ে মন প্রাণ দিয়ে একটা ছবি আঁকলো । সেই খাতাটা কাউকে সে দেখালো না । পরের দিন স্কুলে গিয়ে স্যারকে দেখালো ।স্যার দেখে তো হতবাক হয়ে গেলেন । বললেন, এরকম ছবি তুমি আঁকলে কেন ? স্যার ছবিটা সবাইকে দেখালেন ।
রবির বাবা তার মাকে কিভাবে মারছিল সেই ছবিটা এঁকেছে রবি । তার পর তার বাবা মায়ের মারপিটের কারণটা সে স্যারকে জানালো । স্যার রবিকে কিছু বললেন না । শুধু তার বাবা মাকে একবার স্কুলে ডেকে পাঠালেন । আর খাতাটা নিজের কাছে রাখলেন ।
পরেরদিন বাবা মা দুজনেই স্কুলে গেলেন । স্যার যথা সম্ভব তাদের বোঝালেন আর শিশু মনের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে তার ছবি তাদের চোখের সামনে তুলে ধরে বললেন , এটাই হলো আপনাদের ছেলের আঁকা রবির ছবি ।
0 মন্তব্যসমূহ