ছোটগল্প || আড়ালের ভালোবাসার ঈশ্বর ~সুমিতা চৌধুরী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

  "একি ছাদে দাঁড়িয়ে ভিজছো কেন? জ্বর আসবে তো?"

"ভিজে গেছে আজ সবই। তুমি শুধু শরীর ভেজাটাই দেখলে?"

(অদূরে রাখা বাক্সটা দেখতে পেয়ে) "তুমি এই বাক্সটা বের করেছো? তা, ভালো। কিন্তু, নীচে তো কোনো অসুবিধা ছিল না। আমি তো আজ তোমায় একলাই থাকতে দিয়েছিলাম, যেমন প্রতিবার দিই, তোমার স্মৃতির সাথে। ঠিক আছে,  চলো, নীচে চলো। স্নান করে জামাকাপড় চেঞ্জ করে নেবে।"

"তুমি সবসময় শরীরের ডাক্তার হয়েই রয়ে গেলে ডাক্তারবাবু। মনের ডাক্তার...."

"থামলে কেন? বলো...

কখনোই তোমার মনের ডাক্তার হয়ে উঠিনি... 

তাই?  ভুলে গেছো প্রথম দেখা থেকে অনেকটা সময়?!..."

"না, ভুলিনি কিছুই।  আজ দোষ-গুণ সবই একমাত্র তোমার গায়েই চাপানো যায়। বাকি জন তো ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। আর প্রথম থেকে সবটা নীরবে সয়ে তুমিই তো আস্কারা দিয়েছো।  এখন আর বলে...."

দীপন এসে জড়িয়ে ধরল বোধহয় প্রেমের থেকেও বেশী স্নেহের বাঁধনে অঞ্জলিকে।  (গভীরভাবে অঞ্জলির চোখের দিকে চেয়ে স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে) "আজও আস্কারাই দিলাম।  দেখো তোমার সাথে আমিও ভিজলাম। তোমার কবিতাটাকে সত্যি করে, "একদিন বৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে"। আমি হলে লিখতাম, "আজীবন বৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে।" বাকিটার জন্য এই ডাক্তারবাবু আছে তো। ভরসা আছে তো? আমি জানতাম তুমি আজ অন্য কোথাও পাড়ি দেবে এ মন নিয়ে। এটাই স্বাভাবিক।  তাই সারাদিনের পরে ফেরাতে  এলাম। চলো, সন্ধ্যা হলো। দীপ্তেশ বাবুর জন্য একগোছা  গোলাপ রাখা আছে। সুন্দর করে সাজিয়ে দিও স্নান সেরে। গিজার অন করে রেখে এসেছি। বাক্সটা নিয়ে আমি নামছি। যত্ন করেই নিয়ে যাবো, রেখে আসবো তোমার খাটে আজ তোমার পাশেই। তোমার ইচ্ছে মতো নেড়োচেড়ো, বাধা তো নেই  কোনো।"

"তুমি ঠিক কি? আমার আজও বোঝা হলো না.... জানা হলো না...."

" হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। এতো সবচেয়ে সহজ, কোনো ধাঁধা নেই।  আমি তোমার দীপ্তেশ,  দীপন রূপে এখন তোমার কাছে আছি। তা প্রায় বছর দশেক ধরে হবে। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। চলো ডাক্তারবাবুর জ্বর হলে চলবে না, ডিউটি কামাই কেউ মানবে না।"


স্নান সেরে দীপ্তেশের ছবির সামনে দীপনের গুছিয়ে রাখা ফুলদানিতে  তারই আনা গোলাপ সাজিয়ে ফটোর দিকে তাকাতেই দেখে, দীপ্তেশের হাসি মুখের ছবির সাথে পিছনে দাঁড়ানো দীপনের অমায়িক অবয়ব একসাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। 

অঞ্জলির মনে ভেসে উঠল সেই দিনের স্মৃতি, যেদিন তাঁর আর দীপ্তেশের বিবাহ বার্ষিকীর স্মৃতিতে কান্নায় ভেজা একটা কবিতা আর ছবি, অঞ্জলির স্ট্যাটাসে দেখে প্রথম দীপন দীর্ঘ প্রায় এক বছরের নীরবতা ভেঙে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল দীপ্তেশের মতোই  কবিতায় অঞ্জলিকে এবং সবটা জেনে-বুঝেই আকুলভাবে চেয়েছিল আজীবনের জন্য অঞ্জলিকে আগলে রাখতে নিজের ভালোবাসায়। 

হ্যাঁ, সেই হিসেবে দেখতে গেলে আজ দীপনের সাথে অঞ্জলির ভালোবাসার উৎযাপনের দশ বছর-ও বটে। 

যদিও দীপ্তেশের আড়ালেই থেকে যায় প্রতিবার দীপন, কোনো অভিযোগ না জানিয়ে, শুধুই ভালোবেসে, ভালোবাসার জন্য, যেন আড়ালের ভালোবাসার ঈশ্বর রূপে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ