পোস্ট বার দেখা হয়েছে
।। সাপ্তাহিক সেরা পঞ্চম সপ্তাহ ।।
★প্রথম ★
।।আঠেরোর হাতছানি।।
দেবপ্রসাদ জানা
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
বকুলতলায়, সকালবেলায় সোনালী
বসন্তে পলাশবনে কদমতলায়।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
নদীর ধারে,পুকুরপাড়ে, সমুদ্রের জলোচ্ছাসে
শ্বেত বালুকাতটে কনে দেখা বেলায়।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
সন্ধ্যাবেলায় রুপালী জোছনা মেখে মাঠে
ঘাসের ওপরে শিশির ভেজা পায়।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
আত্মমগ্নতায় জীবনের ভেতরে রঙিন আলো
রাতের কল্লোলিনী দূরন্ত রাজপথে।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
মুক্ত বিহঙ্গের মতো এ ফুল ও ফুল কখনো
বেল, জুঁই চাঁপা পলাশ বকুলের সাথে।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
আলোছায়া সন্ধ্যায় ভাগীরথী গঙ্গার তীরে
পালহীন নৌকায় হাজার স্বপ্নের ভীড়ে।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
পাথরে মাথা ঠুকে পাথরভাঙ্গার গানে
উন্মত্ত যৌবনের গায়ে ভালোবাসা ঘিরে।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
একাকী অযুত কামনা ঢেউ তুলে বুকে
আকাঙ্ক্ষার সিঁড়ির নিচে উন্মাদনা।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
বুকের পাথরে নড়ে ওঠে বেদনার ধ্বনি
মুক্ত শৃঙ্খল পড়ে থাকে, সে মানে না।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
সুন্দরের হাতে হাত রেখে প্রেমে অপ্রেমে
ভালোবাসার চাঁদ করতলে রেখে।
আঠেরো তখন সবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
পৃথিবীর আলো বাতাস অন্ধকার আর
সুখ দুঃখ হাসি আনন্দের সুর মেখে।
আঠেরো তখন সবে ডাকছে হাতছানি দিয়ে
বন্ধনহীন রহস্যময় গ্রহচ্যুত এক প্রানী শাশ্বত
নক্ষত্রের দেশে চোরা রক্তস্রোত দূরন্ত।
আঠেরো তখন সবে ডাকছে হাতছানি দিয়ে
প্রত্যাশায় হাঁটে পরাভবে স্ব-রূপ নির্মাণে
স্নিগ্ধতার ফুল ফোটায় হলুদ বসন্ত।
===
★দ্বিতীয় ★
।।ঝরা পাতার কান্না।।
পিন্টু বেতাল
তুমি শুনেছ কি? কভু গাছেদের কান্না!
তুমি পেয়েছ কি? কভু সবুজ বনে হীরা পান্না!
আমি দেখেছি, বৃক্ষ রাশির...
সুখী দাম্পত্য সংসার!-
আমি, পেয়েছি তাদের,
চামর দোলানো উপহার!
জেনেছি আমি, তাদের সাথে মিশে'-
তাদেরও তো আছে ঘর পরিবার,
পরমস্নেহে লালিত-পালিত পূত্র-কন্যা ।
আমি যখন সকাল-সাঁঝে,
নিতাম তাদের কুশল সংবাদ--
আহ্লাদে আপ্লুত তারা,
দিত আমায় সৌরভে' সাধুবাদ!
আমার হাতের আলতো ছোঁয়ায়,-
তারা, উঠতো বোধহয় খিলখিলিয়ে;
শোনাতো তাদের মধুর হাঁসি'-
পক্ষীকুলের কণ্ঠ দিয়ে!
পরিবারের সকলে মিলে…
তারা দিত আমায় ছায়া'র চাদর!
রঙের জাদুতে মন রাঙিয়ে...
তারা দিত আমায় ফুলের আদর ।
হঠাৎ, সেদিন প্রলয় ঝড়ে,
আমি, লুকিয়ে ছিলাম সাঁঝ বেলাতে!
কম্পিত এই ভীরু বুকে
আমি, পারিনি তাদের খবর নিতে!
রাত কাটি'য়ে প্রভাত আলোয়'
দেখতে গেলাম যখন তাদের!--
তারা, চে'য়ে ছিল আমার পথে'-
শুধু, দৃষ্টিটা ছিল 'নিঃস্ব প্রাণের'!
ভগ্ন দেহে লুটিয়ে তারা,
একে-অপরের আলিঙ্গনে'-
ছোটো, বড়, প্রত্যেকেই আজ,
মৃত্যুপ্রাপ্ত রণাঙ্গনে!
অল্প যারা ধুঁকছে আজি,
তারাও তো হায় সর্বহারা!-
কঁকি'য়ে উঠলো প্রাণটা যে মোর!--
নামলো চোখে অশ্রুধারা'!
ব্যাথায় হৃদয় ভরলো শুধুই
ঝরাপাতার আর্তনাদে!
পদতলে লুটিয়ে তারা, কাঁদছে কেবল,
বেঘোর সুরের অপবাদে!
অল্প কিছু, যারা আছে,
সজীব প্রাণে শীর্ণ দেহী!
তারাই এখন মুক্তো, মানিক,
অসীম সবুজে আগ্রহী!--
ধ্বংসস্তূপ-টায় কান পেতে আজ,
আমি শুনতে পেলাম গাছেদের কান্না!
আবার ঐ ভগ্নস্তুপেই খুঁজে পেলাম,
কিছু বেঁচে থাকা, 'হীরা-পান্না'!
তাদের নিয়েই আবার আমি,
মাতবো নতুন সকাল সাঁঝে--
ঝরা পাতার কান্না ভুলে,
বাঁচাবো তাদের কুশল সংবাদে ।।
====
★তৃতীয় ★
।। কাঙাল হও ।।
অতনু নন্দী
আরও কাছে যাও
অন্তরাল ভালোবাসা তোমাকে সন্ন্যাসী করে তুলবে
গাছেদের কাছে যাও
ছুটে যাও দিগন্তে...
অন্তরাল থেকে নয়, ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে নাও তাকে, দুজনে ছুটে যাও কিংশুক মাঠে
কাঙাল হওয়া জরুরী, মুঠো ফোন বেজে উঠলে অন্তরালে নয়
বুক পেতে দাও ভালোবাসার কাছে
দুঃখের অংশভাগ ভুলে
সজ্জা সাজিয়ে তুলতে আরও নিবিড় হও,
কাঙাল হও!
===
★চতুর্থ ★
।।ডাস্টবিনের কাব্য-১ ।।
আসিফ আলতাফ
ব্যস্ততম শহরের মোড়ে ডাস্টবিন
শাহরিক ঢালে তাতে জৈবনিক ক্লেদ
ডাস্টবিনে মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে
জীবনের সব জঞ্জাল; উচ্ছিষ্ট; নষ্টামির নগ্নফসল
বড়লোকের বউয়ের স্যান্ডেল,
কামার্ত পুরুষের পাশবিকচিহ্ন নিয়ে পড়ে আছে নাইটকুইনের অর্ধছিন্ন বুকের রক্ষক
মদন দেবের কৌপিন
শ্যাম্পুর খালি বোতল; হিরক দাতের কুৎসিৎ হাসিমাখা ব্রাশ, উর্ধ্ব ও নিম্নাঙ্গের চুল;
বাল্যশিক্ষার ছেড়া পাতা; কামসূত্রের ছবি;
ডাস্টবিনে পড়ে থাকে ভ্রণ হত্যার শানিত অস্ত্র, নিহত ভ্রুণ, রক্তমাখা পেটিকোট;
পড়ে থাকে দলাপাকানো টিসু; গভীর রাতে যুদ্ধের ময়দানে নারী সৈনিকের ভেঙেযাওয়া চুড়ি;
কত কী পড়ে থাকে আরও
শহরে এত ক্লেদ, এত পাপ, এত গাঢ় অন্ধকার
ডাস্ট বিন ছাড়া মানুষ তা আর লুকাবে কোথায়?
ডাস্ট বিন আছে বলে শহুরে মানুষ এত সভ্য ও সুন্দর
ডাস্ট বিন আছে বলে শহরের গৃহ পরিপাটি
যারা ডাস্টবিনে লুকায় তাদের জীবনের মোহও মুখোশ
যারা ডাস্টবিনে ঢেলে রাখে জীবনের শব-গন্ধ
পথ চলতে তাদেরই আবার নাকে ওঠে সুগন্ধি রুমাল
আর মানুষের মুখ ও মুখোশ দেখে ডাস্টবিন হাসে!
====
★পঞ্চম ★
।।শ্যেনদৃষ্টি ।।
মধুপর্ণা বসু
আজ আকাশের ডাকঘরে মেঘের খোলা চিঠি মেলে ধরেছি,
গনগনে রোদে মেঘেরাও বেশ শীর্ণ ব্যাকুল তৃষ্ণার্ত,
সেই যে কালো মেয়েটি শ্রমণ আনন্দ কে জলদান করেছিল,
নিরুক্ত আকাশ তার কাছেই জল যাচঞা করেছে কতো যুগ আগে।
শহর, গ্রাম,মফস্বলি ক্রমশ মহামারীর কাছে হাত তুলে পরাজয় স্বীকার করে অধোমুখ, লজ্জিত।
ঘুঘু চড়া নিঃসঙ্গতায় একমাত্র চিলের দৃষ্টি শিকারের গান গাইতে গাইতে নেমে আসছে মাটির কাছাকাছি,
আমাদের পাশে এখন মৃত্যুর নিস্তব্ধ উপনিবেশ,
সেই কালো মেয়েটি আর ফেরেনি কথার উপদ্বীপে, কবিতায়, মহাকাব্যে, আমার কাছে।
ঈশান কোণে ঝড়ের মেঘ রয়েছে, আমরা ভয় পাইনি, আমরা আপাত স্থিতিশীল, অপেক্ষা করুক মৃত্যুর রাজা, শিকারী চিল,
অবশেষে দেখবো, আশ্চর্য রহস্যের সুরে সেই সুদর্শন চিল গাইছে ঘুমপাড়ানি গান।
3 মন্তব্যসমূহ
পাঁচ কবিকেই আমার অভিনন্দন, প্রত্যেকটি কবিতাই ভীষণ ভালো লাগলো ।
উত্তরমুছুনপ্রত্যেক টি কবিতা অনবদ্য
উত্তরমুছুনবলিষ্ঠ কলম ৷ এই কলম আরও বলিষ্ঠ হয়ে উঠুক ৷ কবিদের জানাই অভিনন্দন ও ভালোবাসা
অসংখ্য কলমের মাঝে আমার মলীন কান্না টাকে স্থান দেওয়ার জন্য সাহিত্যের দিশারী "দর্পণ" পরিবারের সকলকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা.....
উত্তরমুছুনআরো বেশী করে এগিয়ে চলার পথে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা